কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(২৫ আগস্ট ) :: রোহিঙ্গাদের ঢল নেমে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়ার আট বছর পূর্তি হচ্ছে আজ ২৫ আগস্ট। গত আট বছরে নানান ধরনের আলোচনা ও কথাবার্তা হলেও ফেরানো যায়নি একজন রোহিঙ্গাকেও।
উল্টো দিনদিন বাড়ছে রোহিঙ্গার সংখ্যা। প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা এখন গলার কাঁটা হয়ে আছে বাংলাদেশের ওপর।
এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য এক বড় বোঝা হয়ে আছে। বিশ্ব জানে, মিয়ানমার থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা এ জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে, যা এ দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও সামাজিক কাঠামোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে।
এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন উদ্যোগ আশার আলো দেখাচ্ছে।
কক্সবাজারে ২৪ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ৩ দিনব্যাপী এ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
বিশ্বের ৪০টি দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এ সম্মেলন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ পুনরায় আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘আগামী ঈদে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ঈদ করতে পারবেন’-ড. ইউনূসের এ বক্তব্য হয়তো উচ্চাভিলাষী শোনায়; কিন্তু এটি যে তার দৃঢ অঙ্গীকারেরই প্রকাশ, তাতে সন্দেহ নেই। এ অঙ্গীকারকে বাস্তব রূপ দিতে তার সরকার সর্বাত্মক চেষ্টাও চালাচ্ছে।
কক্সবাজারের এ সম্মেলন রোহিঙ্গা ইস্যুকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে বলে মনে করি আমরা। তবে এই উদ্যোগের সফলতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাখাইনের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা সরকারের সংঘাতের কারণে সেখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরতে কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
এ ছাড়াও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। গাজায় চলমান সংকটে সংস্থাটির ভূমিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশ্ন উঠেছে। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ এককভাবে এই বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে না। মিয়ানমারের আন্তরিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর সহযোগিতা ছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করা অসম্ভব।
এ সম্মেলন প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করার একটি সুযোগ হতে পারে, তবে এটিই একমাত্র সমাধান নয়। এই উদ্যোগকে সফল করতে হলে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে আরও বেশি সক্রিয় হতে বাধ্য করা অপরিহার্য। এই সম্মেলন শুধু কথার ফুলঝুরি না হয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি সত্যিকারের সমাধানের পথ খুলে দেবে, এটাই প্রত্যাশা।
Posted ২:০৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta